নিজস্ব সংবাদদাতা, নদীয়া : আদালত অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকা নিতে পারে না, নদীয়ার ধানতলা থানার দায়িত্বহীন ভূমিকায় কার্যত ভৎসনা করলেন রানাঘাট আদালতের ক্ষুব্ধ বিচারক। নিঃসন্তান বৃদ্ধার বেদখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তি উদ্ধারের নির্দেশ অমান্য করায় ওসি সুব্রত মালাকারকে শোকজ করলো আদালত।
আজ ১ লা এপ্রিল ধানতলা থানার ওসিকে দুপুর দুটোর মধ্যে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ঘটনাকে ঘিরে রানাঘাট পুলিস জেলায় শোরগোল।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সাত মাস আগে নদীয়ার ধানতলা থানার অন্তর্গত দত্তপুলিয়া পুরাতন বাজার এলাকার বাসিন্দা শ্যামলী রানী বিশ্বাসের (৫৮) স্বামী মারা যান। গতবছরের শেষ দিকে নিঃসন্তান এই বিধবা বৃদ্ধা তাঁর বসতভিটে সহ সমস্ত সম্পত্তি এলাকারই এক স্থানীয় বাসিন্দা অসীম বিশ্বাসের নামে লিখে দেন। অভিযোগ, তারপর থেকেই বৃদ্ধার ওপর বিভিন্ন সময়ে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালাত অভিযুক্ত অসীম বিশ্বাস এবং তার স্ত্রী। বাধ্য হয়ে বহুবার ধানতলা থানার দ্বারস্থ হলেও তার অভিযোগে কর্ণপাত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বৃদ্ধা শ্যামলী রানী বিশ্বাস। তাঁর আরও অভিযোগ, বারংবার অভিযোগ পত্র নিয়ে থানায় গেলেও তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে তিনি চলতি বছরের মার্চ মাসে রানাঘাট আদালতের দ্বারস্থ হন। গত ১৫ ই মার্চ সেই মামলার শুনানিতে রানাঘাটের জুনিয়র ডিভিশন দ্বিতীয় কোর্টের বিচারক সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়চৌধুরী বৃদ্ধার জমির ওপর একটি স্থগিতাদেশ জারি করেন। পাশাপাশি ধানতলা থানাকে তিনি নির্দেশ দেন, অবিলম্বে অভিযোগকারী অসহায় বৃদ্ধা যাতে সেই বাড়িতে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু অভিযোগ, বৃদ্ধার জন্য থানার তরফে নিরাপত্তার ব্যবস্থা সুনিশ্চিতকরণ করেনি পুলিস। পাল্টা ধানতলা থানায় অভিযুক্ত অসীম বিশ্বাস বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করে। গত ২৮ মার্চ বৃদ্ধা শ্যামলী রানী বিশ্বাসকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় অসীম ও তার পরিবার। বাধ্য হয়ে সেদিনই বৃদ্ধা ফের রানাঘাট আদালতের দ্বারস্থ হলে তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়। অসহায় বৃদ্ধা শ্যামলী রানী বলেন, আমার কোনও সন্তান নেই। স্বামীর মৃত্যুর পর অসীমকেই নিজের উত্তরাধিকার মনে করে ওর নামে বাড়ি লিখে দিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত ওরাই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলো। ভিটেবাড়ি হারিয়ে এখন আদালতে এসেছি শুধু ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য। এই মুহূর্তে এক আত্মীয়র বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছি।
পরদিন অর্থাৎ ২৯ মার্চ আদালতের তরফে ধানতলা থানার ওসিকে তলব করা হয়। জানা গিয়েছে, নিজে না এসে থানার এক আধিকারিককে আদালতে পাঠান ওসি সুব্রত মালাকার। ধানতলা থানার সেই আধিকারিককে বিচারক সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়চৌধুরী তাঁর এজলাসে জিজ্ঞেস করেন, গত ১৫ মার্চ আদালতের তরফে যে স্থগিতাদেশ এবং বৃদ্ধার নিশ্চিত বসবাস সুনিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছিল, সেটা কতটা মানা হয়েছে। আধিকারিক আদালতের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে না পারায় এক ঘণ্টার মধ্যে ধানতলা থানার ওসিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক।
বৃদ্ধার আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ বলেন, প্রায় তিন ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও আদালতের নির্দেশ মত হাজিরা দিতে আসেননি ধানতলা থানার ওসি সুব্রত মালাকার। আমরা পুরো সময়টা অপেক্ষা করেছিলাম। সেদিনই বিকেল পাঁচটা নাগাদ ক্ষুব্ধ বিচারক কার্যত ভৎসনার সুরে জানান, পুলিসের এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন ভূমিকার পরেও আদালত ধৃতরাষ্ট্রের মতো অন্ধ হয়ে বসে থাকতে পারে না। ১ এপ্রিল অর্থাৎ শনিবার দুপুর দুটোর মধ্যে ধানতলা থানার ওসি সশরীরে এজলাসে হাজির হয়ে লিখিত কারণ দর্শাতে না পারলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে আদালত। স্বাভাবিকভাবেই আদালত ধানতলা থানার ওসিকে শোকজ দেওয়ার পর প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। এই প্রসঙ্গে ধানতলা থানার ওসিকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি এমন কোনও বড় বিষয় নয়। কোর্ট যে অর্ডার দিয়েছে, সেই অনুযায়ী আমি কোর্টকে কারণ জানাবো। রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার কে কন্নন বলেন, যেহেতু এটি বিচারাধীন বিষয়, তাই আদালতের নির্দেশেই সবটা হবে। যে আধিকারিককে শোকজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁকে সেটা মানতে হবে।