Saturday, December 14, 2024
Homeখবরনীতির অভাবে ধুঁকছে, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা

- Advertisment -

নীতির অভাবে ধুঁকছে, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা

আশিস দালাল (শিক্ষক – বিষ্ণুপুর রসমঞ্জরী হাইস্কুল) স্বাধীনতা লাভের পর সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিবর্তিত নতুন আঙিনায় কেন্দ্রীয় সরকার শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার ও উন্নতি সাধনের জন্য একের পর এক শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিল।সেই শিক্ষা কমিশন গুলি শিক্ষার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী দলিল হিসেবে পরিগণিত হয়ে আছে।রাজনৈতিক পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষানীতির প্রণয়ন ও রূপায়নের যথেষ্ট পার্থক্য রয়ে গেছে।পশ্চিমবঙ্গ ও এর ব্যতিক্রম হয় নি। বছরের পর বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে।কিন্তু সুফল এখনও পূর্ণাঙ্গরুপে পোঁছায় নি।এর কারণ বহুবিধ  হলেও সরকারের শিক্ষানীতির সঠিক ভাবে প্রয়োগের অভাব — এর জন্য দায়ী।তাছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে এক একনীতি সরকার এমন আকস্মিকভাবে নেয় যে শিক্ষিত শ্রেনির স্পর্শকাতরতা তারা খেয়াল রাখে না।ফলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। নীতির

প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশফেল প্রথা তুলে দেওয়া এবং আবার তা ফিরিয়ে আনার সরকারি প্রয়াস —এ সব সিদ্ধান্ত ছাত্রছাত্রীদের বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছে।বার বার পরীক্ষা পদ্ধতির বদল এমনকী প্রশ্নের বিন্যাসের পরিবর্তন এসেছে।রচনাধর্মী প্রশ্নের থেকে সংক্ষিপ্ত,অতিসংক্ষিপ্ত এবং ম্যাল্টিপল চয়েস প্রশ্নের সংখ্যা বেড়েছে।এখন মৌখিক পরীক্ষার পরিবর্তে চলে এল প্রজেক্ট বা প্রকল্প।এই প্রকল্প রূপায়ণে কাম্য শিখন সামর্থ্য  নিঃসন্দেহে ভালো।কিন্তু এর সঠিক ভাবে কাজের মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।কেননা বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বাজারচলতি কিছু বই থেকে ছবি সংগ্রহ করে প্রজেক্ট খাতা তৈরি করে শুধুমাত্র নম্বরের জন্য।
শিক্ষাদান পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাবিদদের মধ্যে অনেক সময় মতানৈক্য থাকলেও শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তো একই। নীতির

নীতির অভাবে ধুঁকছে, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা

শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনুষ্যেত্বের বিকাশ ঘটানো শিক্ষকের প্রধান কর্তব্য। শিক্ষার মান্নোয়নের জন্য শিক্ষক শিক্ষিকাগন অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিবেকানন্দ বলেছেন- “শিক্ষাদানের মূল লক্ষ্য হল চরিত্র গঠন করা। মানসিক বল, বুদ্ধির দীপ্তি ও আত্মপ্রতিষ্ঠার শক্তি সৃষ্টি করা, সব শিক্ষার শেষ কথা মানুষ তৈরি করা”। এর জন্য চাই শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিভাবক -এক গভীর সুনিবিড় সম্পর্ক। শ্রদ্ধা, ভক্তি, স্নেহ সাহচর্য  এই সব কিছুকেই পবিত্র রাখতে হবে। তবেই শিক্ষকের পক্ষে শিক্ষাদান হয়ে উঠবে আনন্দের। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষানীতির প্রণয়ন ও রূপায়নের ক্ষেত্রে সার্বিক পরিবর্তন ঘটেছে।স্কুল গুলির বড় অংশে ছাত্রের তুলনায় শিক্ষক কম। পরিকাঠামোগত অনেক অসুবিধার ফলে শহর থেকে গ্রামে সকলেই বেসরকারি ঝাঁ চকচকে স্কুলের দিকে ঝুঁকছে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের এখন রমরমা । এর অন্য একটি কারণ অবশ্যই সিলেবাস। বাংলা মাধ্যমের সিলেবাস এখনও ইংরেজি মাধ্যমের সিলেবাস থেকে পিছিয়ে রয়েছে। অভীক মজুমদারের নেতৃত্বে সিলেবাস কমিটি যদিও সংস্কার সাধন করেছে। তবু ও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এখনও সিলেবাসে নাচ, গান, ড্রয়িং, মূল্যবোধের বিষয় গুলি উপেক্ষিত।

যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের কোন প্রাইভেট টিউশন নেই

বামফ্রন্ট আমলে শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেতন বৃদ্ধি ঘটলেও অশোকমিত্র কমিশনের সুপারিশ মেনে প্রাথমিকে ইংরেজি তুলে দেওয়া এবং অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশফেল প্রথার বিলুপ্তি ঘটিয়ে ছাত্রছাত্রীদের যে সমূহ ক্ষতি হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষার স্হান যেখানে ভারতবর্ষের প্রথম ছিল,বর্তমানে তা আজ অনেক নীচে নেমে গেছে। বার বার ভুল শিক্ষানীতির ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছাত্র ছাত্রীরা। ভবিষ্যতে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে যা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। সর্বভারতীয় পরীক্ষায় এই রাজ্যের সাফল্য ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে।এর দায়িত্ব শুধুমাত্র শিক্ষক শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের উপর না চাপিয়ে সরকারের শিক্ষানীতি ও সমানভাবে দায়ী। সম্প্রতি সরকারি নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছে ফণী ঘৃর্ণিঝড় এবং প্রচন্ড দাবদাহের জন্য রাজ্যের স্কুল গুলি 3 রা মে থেকে 30 শে জুন পর্যন্ত ছুটি থাকবে। এর জন্য ছাত্রছাত্রীদের পঠন পাঠনের ব্যাঘাত ঘটবে। সিলেবাস সময়ে শেষ হবে না। যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের কোন প্রাইভেট টিউশন নেই, তারা বই থেকে এই দুই মাস দূরে সরে থাকবে। স্কুল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মনে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। এর ফলে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গুলির রমরমা বৃদ্ধি পাবে। নীতির

পরীক্ষা ব্যবস্থা এখন একটি প্রহসনে পর্যবসিত হয়েছে

মুর্শিদাবাদ ফুড ফ্যাস্টিভ্যালে সৃষ্টিরূপেনর ফ্যাশন শো

বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থা এক গভীর সংকটের মুখোমুখি। বছরের পর বছর ধরে শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং মূল্যায়ণ নিয়ে অনবরত গিনিপিগের মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েই চলেছে। আসলে প্রচলিত পদ্ধতির বিবিধ সমস্যার কথা জানা আছে বলেই বারবার পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও সংস্কার ঘটে চলেছে। শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, 2009 , নিরবচ্ছিন্ন সার্বিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে পুরো শিক্ষাবর্ষ জুড়ে শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও নথিবদ্ধকরণ হয়। তাই নতুন পাঠক্রমে প্রস্তুতিকালীন ও পর্যায়ক্রমিক দুই ধরনের মূল্যায়নের ভাবনাই স্হান পেয়েছে। প্রস্তুতিকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যে পাঁচটি সূচকের কথা ভেবে করা হয়েছে তার সম্পূর্ণ রূপায়ণ করার মতো পরিকাঠামোর অভাব আছে। বিশেষ করে যে সমস্ত স্কুলে ছাত্রছাত্রীর তুলনায় শিক্ষক কম। পরীক্ষা ব্যবস্থা এখন একটি প্রহসনে পর্যবসিত হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে দেখা যায় বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী মনে করে নকল করা তাদের অধিকারের মধ্যেই পড়ে। আসলে পরীক্ষা ব্যবস্থা অন্তঃসারশূন্যতায় পর্যবেশিত। এই ব্যবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। নীতির

ছাত্রীদের জন্য তো বিশ্ববন্দিত কন্যাশ্রী প্রকল্প

দীর্ঘ দিন কোভিড পরিস্থিতিতে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষাজগতে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা তো দূরের কথা , স্কুলের নিয়মকানুন সব ভুলে গেছে। কোভিড পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে আসতে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় শুধুমাত্র শিক্ষক শিক্ষিকা নয়, সর্বস্তরের মানুষ কেই এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষার মানোন্নয়ন কীভাবে সম্ভব সে বিষয়ে শিক্ষাবিদদের ভাবতে হবে। শুধুমাত্র অ্যাকটিভিটি মূলক পঠন পাঠন থেকে এবার বেরিয়ে আসতে হবে। পাড়ায় শিক্ষালয় এক সপ্তাহ ধরে চললেও তার ফল আশাতীত নয়। ভাবতে হবে কীভাবে স্কুল ছুটদের আবার বিদ্যালয়ের আঙিনায় ফেরানো যায়।
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বহু প্রকল্প। বই, ব্যাগ, পোশাক,সাইকেল তো আছেই সেই সঙ্গে অনুন্নত সম্প্রদায়ের জন্য নগদ অর্থ, সংখ্যালঘুরা ও পায়। ছাত্রীদের জন্য তো বিশ্ববন্দিত কন্যাশ্রী প্রকল্প। যার ফলে স্কুলছুট অবশ্যই কমেছে। বাল্য বিবাহ কমেছে। এ সব সিদ্ধান্ত স্কুল তথা সমাজের হিতকর। আসলে শিক্ষকদের উপরেই সমাজ গঠনের গুরুদায়িত্ব। সেই কাজ শিক্ষক সমাজ সুনিপুণ ভাবে করে চলেছে। ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক ঐক্যকে আরও দৃঢ় হতে হবে। সরকারের কঠোর শিক্ষানীতি প্রয়োগ করলে ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষার মান্নোনয়ন ও ঘটবে আশা করা যায়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Most Popular

Recent Comments