মাটন রান্নায় ভারতের এক এক প্রদেশের এক এক রকম উপকরণ ও প্রণালী। মোটামুটিভাবে আমিষ মাটনের ক্ষেত্রে প্রায় সব রাজ্যেই পেয়াঁজ,রসুন,আদা,গরম মসলা ও সর্ষের তেল থাকে কেমন। এর সঙ্গে এক এক রাজ্যে এক এক রকম উপকরণ দেওয়া হয়। মাটন হান্ডি অনেকটা আমাদের মাটন কষার মতোই। তবে এই রান্নার বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য স্বাদ হয় অপূর্ব। মাটির গন্ধ নিয়ে মাটনের পদ পাতে পড়লেই জিভে জল চলে আসে। যেমন ধরুন বিহারের চম্পারণ মাটন। এই পদ আজও ধরে রেখেছে নিজস্ব অভিনবত্বকে। এই রান্নার অভিনবত্ব হলো মাটনের গন্ধ সম্পূর্ণ রক্ষিত হয়।
বিহারের চম্পারণ জেলা থেকেই নামটি এসেছে। অনেক চম্পারণ মাটনকে আবার কটা নামেও চেনেন; কেউ কেউ আবার একে ‘আহুনা মাটন’, কেউ আবার ‘মটকা গোস্ত’ বলে থাকেন। তবে ‘চম্পারণ মাটন হান্ডি’ নামেই এই পদ বেশি খ্যাতি পেয়েছে। চম্পারনের লাল মাটির হাঁড়ি হয় পাথরের মত শক্ত। ফলে আগুনের তাপে ফাটার কোনো সম্ভাবনা নেই।
প্রথমে হাঁড়ি ভালো করে ধুয়ে রোদে বা আগুনে শুকিয়ে নিতে হবে।মাটির হাঁড়িতে বা মটকায় দম স্টাইলে ঐতিহ্যগতভাবেই রান্না করা হয় এই পদ। অর্থাৎ মশলা দিয়ে মাখা মাটন হাঁড়ির ভিতরে রেখে উপর থেকে ঢেকে দিয়ে হাঁড়ির মুখে আটার প্রলেপ দিয়ে সিল করে দেওয়া হয় যাতে বাষ্প বাইরে যেতে না পারে। এরফলে ভিতরে বাষ্প মাটনকে নরম তুলতুলে করে তোলে! তবে এই মাটনটি খুব কম আঁচে রান্না করতে হয়। এটি সাধারানত রুটি বা ভাতের সাথে খাওয়া হয় স্মোকি মাটনের এই পদ। এটি বিহারের অন্যতম জনপ্রিয় রান্না। এতে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, লবঙ্গ, দারুচিনি, গরম মশলা এবং লাল লঙ্কার গুঁড়ো পরিমিত ভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইদানিং অবশ্য টকদই বা পাতি লেবুর রস দেওয়া হয়।
এ ক্ষেত্রে খাসি না হয়ে ছোট পাঁঠার মাংস হলে স্বাদ আরো বেড়ে যায়।মাটনে সেরা স্বাদের জন্য সরষের তেলের ব্যবহার করা হয়। আর সরষের তেলের ব্যবহারই চম্পারণ মাটনের অন্যতম একটি মূল বৈশিষ্ট্য। তবে ঘানিতে পেষানো সরষের তেলেরই পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। চম্পারণ মাটনের এই রেসিপিতে মাটন ম্যারিনেট করতেই প্রায় অর্ধেক সরষের তেল দিয়ে দিতে হবে এবং বাকি অংশটুকু রান্না করার জন্য ব্যবহার করতে হবে। হাত দিয়েই মাটন ম্যারিনেট করার চেষ্টা করুন, তবে অবশ্যই ভালো করে হাত ধুয়ে নিন। সাধারণত মাটন রান্না করতে তেল বেশি লাগে এবং সময়ও লাগে। তাই মাটন রান্না করতে যেন অধৈর্য হয়ে উঠবেন না। মাটনভালো করে সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।