উত্তর কলকাতার গৌরাঙ্গকে চিনেছিলেন বিশ্ববিখ্যাত চিত্র পরিচালক মৃনাল সেন। তিনি বুঝেছিলেন, ওই নাকশাপন্থী ছেলেটার মধ্যে অভিনয় প্রতিভা আছে। তিনি গৌরাঙ্গকে দিয়েই করালেন বিখ্যাত ‘মৃগয়া’ ছবি। ব্যাস, তার পরেই শুরু তাঁর জার্নি। প্রথম ছবি ‘মৃগয়া’-তে অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। এবার ভারতীয় সিনেমার সবচেয়ে বড় সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার পাচ্ছেন প্রবীণ অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। ভারতীয় সিনেমায় বিপুল অবদানের জন্য মিঠুন চক্রবর্তীকে দাদাসাহেব ফালকে সম্মান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন নির্বাচকরা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এক্স-এ খবরটি ভাগ করে নিয়েছেন। কিংবদন্তি অভিনেতাকে ভারতীয় সিনেমায় অনবদ্য অবদানের জন্য এই বিশেষ পুরস্কারে সম্মানিত করা হবে। সকলে খুবই তাঁর এই নতুন শিরোপায়।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘মিঠুনদার অসাধারণ সিনেমাটিক জার্নি প্রতিটি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে। দাদাসাহেব ফালকে সিলেকশন জুরি কিংবদন্তি অভিনেতাকে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় সিনেমায় অবিস্মণীয় অবদানের রয়েছে মিঠুন চক্রবর্তীর।’ বিনোদন জগৎ সূত্রে জানা গেছে, ৮ অক্টোবর ৭০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে মিঠুন চক্রবর্তীকে পুরস্কারটি প্রদান করা হবে। এই খবরে উদ্বেলিত মিঠুন।
মিঠুনের জীবন কিন্তু যথেষ্ট ঝঞ্ঝামুখর। এই জায়গায় পৌঁছাতে তাঁকে প্রচুর লড়াই করতে হয়েছে। মিঠুনের কেরিয়ারে মোট ৩টি জাতীয় পুরস্কার রয়েছে। ১৯৮৯ সালে একসঙ্গে ১৯টি ছবি মুক্তি পায় মিঠুনের। যা লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে রয়েছে। বলিউডে সেই রেকর্ড এখনও অটুট। ১৯৮২ সালে মিঠুনের ‘ডিস্কো ডান্সার’ বক্স অফিসে দুর্দান্ত ব্যবসা করে। ওই ছবি থেকেই মিঠুন খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সুদূর রাশিয়াতেও। আজও রাশিয়ায় অতিজনপ্রিয় বলিউড ছবি ডিস্কো ডান্সার। ১৯৯০ সালে অগ্নিপথ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেতার পুরস্কার হিসেবে ফিল্মফেয়ার পান তিনি।
উত্তর কলকাতার বসন্ত কুমার চক্রবর্তী ও শান্তিরানিত সন্তান গৌরাঙ্গ হঠাৎ ‘৭০ এর দশকে নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পরে। ভাইয়ের অকাল মৃত্যুর পরে নকশাল আন্দোলন ছেড়ে দেন তিনি। সিনেমায় কেরিয়ার গড়তে পাড়ি দেন মুম্বই। ১৯৭৬ সালে মৃণাল সেনের মৃগয়া ছবিতে নজর কাড়েন মিঠুন। তারপরে শুরু হয় তাঁর জীবনের নতুন লড়াই। হিন্দি ও বাংলা সিনেমায় তাঁর সমান বিচরণ। তাঁর রাজনৈতিক জার্নি বেশ বৈচিত্রের। তিনি একসময় বাম নেতা সুভাষ চক্রবর্তীর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। পরে তৃণমূলের রাজ্য সভার সদস্য হন, শেষে এখন তিনি বিজেপি নেতা। কিন্তু সব কিছু ছাড়িয়ে তিনি একজন আন্তর্জাতিক মানের অভিনেতা।