প্রথমে উত্তরবঙ্গে হয়েছিল প্রবল বন্যা। তিস্তার জল বিপদসীমা থেকে অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছিলো। সেই পর্বে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল আনেন। আর তার পরেই দক্ষিণবঙ্গের বীরভূম, বর্ধমান, হুগলী, হাওড়া ও দুই মেদিনীপুর ডুবেছে বৃষ্টি ও ডিভিসির জলে। মুখ্যমন্ত্রী ছুটে গিয়েছিলেন দক্ষিণবঙ্গের বন্যা কবলিত জেলাতে। নিজের হাতে ত্রাণ বিলি করেছেন। ডিভিসি থেকে রাজ্যের প্রতিনিধীদের পদত্যাগ করিয়েছেন। দক্ষিণের জল সামান্য কমতেই আবার উত্তরবঙ্গে বন্যা। উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে নাগাড়ে বৃষ্টির জেরে উত্তরবঙ্গের পার্বত্য এলাকার পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক হয়ে পড়ছে। ধসের জেরে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক এখনও চালু হয়নি। বাংলা–সিকিমের মধ্যেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সূত্রের খবর, এই আবহে রবিবার পাহাড় সফরে রওনা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে পারেন। রবিবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়ি যাবেন। আর সোমবার প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। লোকসভা নির্বাচনের পর প্রথম উত্তরবঙ্গ সফরে রবিবার বাগডোগরায় পৌঁছবেন মুখ্যমন্ত্রী। দার্জিলিং, কালিম্পং এবং সমতলে প্রবল বৃষ্টির জেরে একাধিক এলাকায় ধস নেমেছে। সূত্র মাধ্যমে সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখতে চাইছেন তিনি।
এদিকে আবার তিস্তা ও আত্রেয়ী নদীর জল বিপদসীমার উর্দ্ধে। নদী সংলগ্ন এলাকার মানুষদের অনেককে ইতিমধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে ত্রাণ বিলি। তিনি নিজেও সেই ত্রাণ বিলি পর্যবেক্ষণ করতে চান। নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, উত্তরকন্যার মূল প্রশাসনিক ভবনে রাতে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠক সেরে বিকেলে আবার কলকাতায় ফেরার কথা – যদি না বিশেষ কোনো সমস্যা তৈরী হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রশাসনিক সফর নিয়ে চূড়ান্ত তৎপর জেলা প্রশাসন। জানা যাচ্ছে, জেলা প্রশাসনের উচ্চ পদস্ত আধিকারিকরা এই নিয়ে ইতিমধ্যে নিজেদের মধ্যে মিটিং করেছেন। নিম্নচাপের জেরে গত মঙ্গলবার রাত থেকে উত্তরবঙ্গের দুই পাহাড়ি জেলা এবং জলপাইগুড়িতে লাগাতার বৃষ্টি শুরু হয়। গোটা দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলা জুড়ে নানা জায়গায় নেমেছে ধস। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং এবং মিরিকের রাস্তা খোলা থাকলেও ধস ও লাগোয়া পাহাড় থেকে লাগাতার পাথর নামার কারণে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। গোরুবাথান- লাভা- আলগাড়া-পেডং হয়ে সিকিমের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও শুক্রবার রাতভর কালিম্পং, দার্জিলিং ও কার্শিয়াংয়ের পাশাপাশি সিকিমে প্রবল বৃষ্টিপাতের জেরে তিস্তা নদীতে জলস্তর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গে আবার বন্যা।
পাহাড়ের নিচু অংশে বন্যা পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। মহালয়ার আগে এই অবস্থায় চিন্তিত মুখ্যমন্ত্রী ও প্রশাসন। এদিকে আবহাওয়া অফিসের বার্তা – এবার পুজোতে বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা। এই মুহূর্তে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায়। তিস্তার জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা বাজার এলাকার বিস্তীর্ণ অংশ শনিবার সকাল থেকে নতুন করে জলমগ্ন হয়ে পড়ে। যে নিম্নচাপের জেরে এই বৃষ্টি চলছিল, সেটা ক্রমশ উত্তরবঙ্গ থেকে সরে যাচ্ছে বলে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর। ফলে আজ, রবিবার থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু নতুন করে বৃষ্টি হলে আবার সংকট দেখা দেবে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের গ্যাংটক শাখার আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘রবিবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে।’ আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দার্জিলিং ও কার্শিয়াংয়ে গড়ে ৬০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। শিলিগুড়ি শহরের বুক চিরে যাওয়া মহানন্দা, পঞ্চনই নদীতে জলস্তর বেড়েছে। এ দিনও ফুলবাড়িতে মহানন্দা ব্যারাজের গেট খুলে রাখতে বাধ্য হন সেচ আধিকারিকেরা। লাগাতার বৃষ্টিতে জেরবার সিকিমও।
সমস্ত বিষয়টা দেখে মুখ্যমন্ত্রী পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। জানা যাচ্ছে, উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া দপ্তরের আধিকারিকদের তিনি সভায় উপস্থিত থাকতে বলেছেন। শুধু শিলিগুড়ির সঙ্গে যোগাযোগের সমস্যাই নয়, প্রতিবেশী এই রাজ্যের নানা এলাকায় ধসের জেরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।ডামথাঙ-নামচি রোড, ফুদাঙ-মঙ্গন রোড, নয়াবাজার- লেগশিপ রোডের মতো বড় রাস্তার পাশাপাশি অসংখ্য ছোট রাস্তাও বন্ধ। সব মিলিয়ে খুবই উদ্বেগজনকে পরিস্থিতি উত্তরবঙ্গের। আজ বিকেল ৫ টার মধ্যে বাগডোগরা পৌঁছে তিনি প্রথম সভা করবেন। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য ইতিমধ্যে সেজে উঠছে উত্তরবঙ্গ।