বৃহস্পতিবার ছিল আর জি করের মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে শীর্ষ আদালতে দ্বিতীয় দিনের শুনানি। নির্ধারিত সময়, সাড়ে দশটা নাগাদ শুরু হয় শুনানি। কিন্তু সেই শুনানি পর্বে এমন অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় রাজ্যের আইনজীবীদের, যে প্রশ্নের কোনো উত্তর তারা দিতে পারেন নি। স্বাভাবিক কারণেই ওই মর্মান্তিক কাণ্ডে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেক। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে। রাজ্যের পক্ষে শওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল সহ মোট ১০ জন আইনজীবী। প্রথম থেকেই প্রধান বিচারপতিদের প্রশ্নের মুখে বড়ো অসহায় ছিলেন রাজ্যের প্রধান আইনজীবী কপিল সিব্বল। রাজ্য সরকারের আইনজীবীর দেওয়া টাইমলাইন নিয়ে ছত্রে ছত্রে প্রশ্ন তুলল সর্বোচ্চ আদালত। পড়ুয়া-চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার থেকে শুরু করে, ময়নাতদন্ত এবং FIR দায়ের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের প্রশ্ন, ‘FIR দায়েরের আগে কী করে ময়নাতদন্ত হল?’ এদিন শীর্ষ আদালত প্রশ্ন করে, ‘সকাল সাড়ে ১০টায় অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়, সন্ধে সাড়ে ৬টা-সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ময়নাতদন্ত। এরপর রাত সাড়ে ১১টায় কেন অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হল? অপরাধের জায়গা সুরক্ষিত করতেই বা এত দেরি হল কেন?’ স্বাভাবিক কারণেই বিব্রত বোধ করেন সিব্বল। তিনি উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেন।
আদালত স্পষ্ট করেই বলেন, তথ্য প্রমাণ সংরক্ষণে প্রচুর গাফিলতি ছিল রাজ্যের। খুনের জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ লোপাট করার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বলের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করে, ‘পরের বার শুনানির সময় যখন আসবেন, তখন একজন দায়িত্বশীল পুলিশ অফিসারকে নিয়ে আসবেন। কেননা আমরা এখনও এই প্রশ্নের উত্তর পাইনি যে, কখন অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে।’ এর পরেই এক বিচারপতি বলেন, রাজ্যের আইনজীবীর কথায় অনেক ফাঁক রয়ে গেছে। তাই সব প্রশ্নের উত্তর উনি দিতে পারছেন না। যদিও রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল একাধিক যুক্তি খাড়া করেন, যদিও তা ধোপে টেকেনি সেঅর্থে। আর এই ইস্যুতেই তাঁর সঙ্গে সলিসেটর জেনারেল তুষার মেহেতার একাধিক প্রেক্ষিতে বাগবিতণ্ডা হতে দেখা যায়। সেই সময় কপিল সিব্বল একটু হেসে ওঠেন। সেই সময় সময়ে রেগেই সলিসেটর জেনারেলকে রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘দয়া করে হাসবেন না। একটা মেয়ের প্রাণ গিয়েছে।’ স্বাভাবিক কারণেই কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় সম্পূর্ণ আদালত।
আদালতে শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, এই বিষয়ে কি রাজ্য কিছু গোপন করতে চাইছে? তা নাহলে কেন সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর তারা দিতে পারছে না। কেন প্রথমে আত্নাহত্যা বলা হলো? কেন এতো দেরিতে FIR হলো? কেন ১৪ আগস্ট ৫/৬ হাজার দূরবৃত্ত ওখানে ভাঙচুর করার সাহস পেলো? কি উদ্দেশ্যে তারা ভাঙচুর করলো? কেন পুলিশ তাদের আটকাতে পারলো না? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে খুবই বিব্রত হয়ে ওঠেন রাজ্যের আইনজীনীর দল।