গত ৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সারা দেশকে নাড়িয়ে দেয়। শুরু হয় প্রতিবাদ আন্দোলন। তাৎক্ষনিকভাবে রাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করে একজনকে। তারপরে ‘মেয়েদের রাত দখল’ আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা বাংলা। আর সেই রাতেই ৬/৭ হাজার দূরবৃত্ত প্রমাণ লোপাটের জন্য তছনছ করে আর জি করের একটা অংশ। কোনো সংগত কারণ না থাকা সত্ত্বেও ওর ঠিক পাশের অংশ ভেঙে দেওয়া হয় বুলডোজার দিয়ে। এ ক্ষেত্রেই অভিযোগ ওঠে প্রমাণ লোপাটের। বিক্ষোভ সমাবেশে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা বাংলা। এর মধ্যেই তদন্তের ভার নেয় CBI. প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ওঠে বহু অভিযোগ। যদিও সরকার তাকে পদন্নতি দিয়ে ন্যাশনল মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালের প্রিন্সিপাল করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় পড়ুয়াদের গণপ্রতিরোধে। CBI ক্রমাগত জেরা করে চলেছে ডাঃ সন্দীপ ঘোষকে। এই পর্যন্ত ছিল আন্দোলনের একটা ধারা।
এর পরেই হঠাৎ ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ নামে কোনো এক অজানা সংগঠনের ডাকে ২৭ তারিখ নবান্ন অভিযান। আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক মারামারি, রক্তক্ষয়, উত্তেজনা। আর তার প্রেক্ষিতে বিজেপি বাংলা বনধ ডাকে ২৮ তারিখ। বনধ প্রতিরোধ করতে পথে নামে পুলিশ ও তৃণমূল। রক্ত ঝড়ে, গুলি চলে, আহত হয় বহু মানুষ। ইতিমধ্যে বিজেপি রাজ্য সরকার ও পুলিশের অত্যাচারের প্রতিবাদে আগামী ১৫/২০ দিনের তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করে দিয়েছে। আবার ওই ২৮ তারিখই ছিল TMCP র প্রতিষ্ঠা দিবস। সেই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর কর্মীদের দেন ‘ফোঁস’ করার বার্তা। ঘোষণা করেন আগামী সেই ১৫/২০ দিনের আন্দোলন কর্মসূচি। এবার প্রশ্ন – এই সমস্ত কিছুর মধ্যে ‘তিলোত্তমা’ কোথায়? নেই তিলোত্তমা। আছে দুই রাজনৈতিক দলের আগ্রাসন। বিজেপি রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে চাইছে, আর তৃণমূল নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে। নেই তিলোত্তমা, নেই ওই নির্মম ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন। আছে শুধুই রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা। আর সেই চেষ্টার কারণেই হারিয়ে যাচ্ছে তিলোত্তমা, শুকিয়ে যাচ্ছে তাঁর চোখের জল। অসহায় হয়ে নাগরিক মহল দেখছে রাজনৈতিক নাট্যমঞ্চ আর পরবর্তী ভোটের জন্য গুছিয়ে রাখছেন ‘ভোটার কার্ড।’