সাধারণভাবে আমরা জানি মামা শকুনির খুব স্নেহের পাত্র ছিল দুর্যোধন। কিন্তু আদপেও তা সত্য নয়। শকুনির প্রথম থেকেই লক্ষ্য ছিল কৌরবে বাংশের ধ্বংস। আর তাতে তিনি সফল। এর পিছনে আছে মহাভারতের প্রায় ভুলে যাওয়া এক কাহিনী।
ধৃতরাষ্ট্রের বিবাহের পরে ভীষ্ম জানতে পেরেছিলেন, গান্ধারী বিধবা। সেই কথা লুকিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অথচ এই সম্বন্ধ এনেছিলেন স্বয়ং ভীষ্ম। তিনি প্রবল ক্ষুব্ধ হয়ে গান্ধার বংশের রাজা সুবল সহ সকলকে বন্দি করে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। তাদের জন্য খাবার দেওয়া হতো খুবই কম। তখনই ভীষ্ম ও কৌরবদের এই অবিচারের বদলা নিতে প্রতিহিংসার আগুন জ্বলতে শুরু করে রাজা সুবলের মনে।
বন্দি গান্ধার-রাজ ঠিক করেন, তাঁর পরিবারের এক সদস্যকে যেকোনো মূল্যে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেইমতো সবথেকে চতুর ও সবথেকে ছোটো পুত্র শকুনিকে সব খাবার খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখেন। রাজা সুবল মৃত্যুর আগে শকুনির পায়ে ছুরিকাঘাত করেন। আর বলেন, এই আঘাত তাঁকে প্রতিশোধের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। সুবল বলেছিলেন, শকুনি তুমি এখন থেকে খুঁড়িয়ে হাঁটবে। আর প্রতি পদক্ষেপে তোমার মনে পড়বে কৌরবরা কী ভীষণ অন্যায় করেছিলেন তাঁদের সঙ্গে। আর বলে গিয়েছিলেন, আমার মৃত্যুর পর হাতের হাড় দিয়ে পাশার ঘূঁটি বানাবে। এই পাশার ঘূঁটিই তোমাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে। সেইমতো প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার খেলায় মেতে উঠেছিলেন শকুনি। পরিবারের সবাইকে চোখের সামনে মরতে দেখে, তাঁর মনে আগুন জ্বলতে শুরু করেছিল।
শকুনি ছিলেন খুবই ধূর্ত ও কপট। তিনি ক্রমেই মহাভারতের প্রধান খলনায়ক হয়ে ওঠেন। তাঁক কপট বুদ্ধিতেই কুরু বংশ ধ্বংস হয়ে যায়। বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েই তিনি দুর্যোধনের প্রধন পরামর্শদাতা হয়ে উঠেছিলেন। কালকূট বিষ প্রয়োগ করে ভীমকে হত্যার চেষ্টা, জতুগৃহে কুন্তী-সহ পঞ্চ পাণ্ডবকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা, সবই ছিল শকুনির মস্তিষ্কপ্রসূত। তারপর দ্যূত-ক্রীড়ার আয়োজন করে যুধিষ্ঠিরকে সর্বস্বান্ত করা এবং দ্রৌপদীকে পণ ধরার পরামর্শ দিয়ে তিনি কৌরবদের জন্য শেষ পেরেকটি পুঁতে দিয়েছিলেন। তিনি এমনই চিত্রনাট্য তৈরি করেছিলেন যে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ অবধারিত হয়ে উঠেছিল। তারপর একে একে কৌরবদের বিনাশ। যুদ্ধের একেবারে শেষদিনে মৃত্যু হয়েছিল শকুনির। সহদেবের হাতে তাঁর নিধন হয়। এভাবেই মৃত্যুর মধ্য দিয়েই জীবনে চরম প্ররিশোধ নিয়ে গিয়েছিলেন মামা শকুনি।