মহাভারত শুধু অনন্ত জ্ঞানের সম্ভার নয়, মহাভারত ভারতের ধৰ্মীয় ইতিহাসের এক দলিল। সেই দলিলের অন্যতম উপপাদ্য বিষয় হলো, আঠারো দিনের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। তারপর? সেই যুদ্ধে বিজয় মালা পরে যুদ্ধষ্ঠির শুরু করলেন তাঁর রাজত্ব। তারপর? তার পরের ঘটনাই এখানে আমরা উল্লেখ করবো।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পাণ্ডবদের জয়ের পরে তারাই হস্তিনাপুরের শাসন করেছিল ৩৬ বছর। যুধিষ্ঠির হস্তিনাপুরের সিংহাসনে বসেন। আর গান্ধারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে অভিশাপ দেন, যেভাবে কৌরব বংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, পুরো যাদব বংশও সেইভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। এখানেই শুরু হয় দুটি পথ – একটি যুধিষ্ঠিরের রাজত্ব ও অপররটি কৃষ্ণের যদু বাংশের ধ্বংস।
গান্ধারীর অভিশাপ কাজ শুরু করেছিল তারপরই। নানা অপ্রীতিক ঘটনা ঘটে থাকে যাদবকূলে। নিজেরাই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। দ্বারকায় যা ঘটতে শুরু করেছিল তা দেখে কৃষ্ণ যাদববংশ ছেড়ে অর্জুনকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাত্রা করেছিল প্রভাসের উদ্দেশে। কিন্তু সেখানেও শান্তি নেই। গন্ধরীর অভিশাপে ধ্বংসের মুখে যদু বাংশ। তিনি যখন বিদ্রোহের আগুন নেভানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন তখন একদিন এক ব্যাধ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাতুন চরণকে পাখি মনে করে তির নিক্ষেপ করেন। তারপরই সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পরে সেই তীরের বিষ। এর পরেই নশ্বর দেহ ত্যাগ করেন কৃষ্ণ।
অন্যদিকে কৃষ্ণেরই পরামর্শে যুধিষ্ঠির সশরীরে স্বর্গে যাবেন বলে ঠিক করেন। কারণ দ্বাপর যুগ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এবার শুরু হবে কলিযুগ। সেইমতো মহারাজ যুধিষ্ঠির অভিমন্যু-পুত্র পরীক্ষিতকে রাজমুকুট পরিয়ে সিংহাসন ছেড়ে স্বর্গযাত্রায় বেরিয়ে পড়েন। দেশবাসীকে বিদায় জানিয়ে অতি প্রতিকূল রাস্তায় এগিয়ে চলে সবাইকে নিয়ে যুধিষ্ঠির। যুধিষ্ঠিরের নেতৃত্বে পাণ্ডবরা সশরীরে স্বর্গে যাত্রা করেন। সঙ্গে নেন মহারানী দ্রৌপদীকেও। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল সশরীরে স্বর্গে পৌঁছনো। সে জন্য স্বর্গে পৌছনোর জন্য হিমালয়ে আরোহণের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের স্বর্গযাত্রায় যোগ দেন এক কুকুর। সেই কুকুরই তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়। সকলেই চলেছেন হিমালয়ের চূড়ার দিকে স্থির মন্থর গতিতে। সামনে চলেছে কুকুরবেশি ধর্ম।
কিন্তু স্বর্গের পথে একে একে মৃত্যু হয় যুধিষ্ঠির বাদে সবার। প্রথমেই মৃত্যু হয় দ্রৌপদীর। তারপর সহদেব, নকুল, অর্জুন ও সবশেষে ভীমের মৃত্যু হয়। সশরীরে একমাত্র স্বর্গে পৌঁছান যুধিষ্ঠির। অভিযান শেষ হয়। শেষ হয় মহাভারতের অন্তর্ধান পর্ব। দ্বাপর যুগের শেষে শুরু হয় কলিযুগ। ঘটলো একটা যুগের অবসান। সেই কলিযুগ এখনও এগিয়ে চলেছে। পুরান অনুযায়ী আবার হয়তো আসবে সত্যযুগ।