ভারতীয় মাইথলোজি হলো প্রচীন ভারতীয় ধৰ্মীয় জীবনের অভিধান। পুরানে আছে হিন্দু তথা বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মের সমস্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। সেখান থেকেই অমরা ‘দুর্গা’ নামের উৎসের একাধিক প্রচলিত কিংবদন্তি পাই। চণ্ডীতে তো ‘দেবী’কে অম্বিকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। কবে থেকে দুর্গা হিসেবে অভিহিত হলেন তিনি? সাধারণভাবে বলা হয়, ত্রিভুবনের দুর্গতি নাশ করার জন্যও তাঁর নাম ‘দুর্গা’ হয়েছিল বলে প্রচলিত। কিন্তু এর বাইরেও দুর্গা নামের উৎস নিয়ে প্রচলিত আছে একাধিক কাহিনী। সংস্কৃত ভাষা তাত্বিকেরা বলেন, দুর্গা শব্দের , ‘দ’ অক্ষরটি দৈত্যবিনাশ সূচক, উ-কার বিঘ্ননাশ সূচক, রেফ রোগ নাশ করে, ‘গ’ অক্ষরটি পাপনাশ সূচক, অ-কার শত্রু নাশ করে। অর্থাৎ, বিষয়টি দাঁড়াল– দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুকে নাশ করে যিনি সৃষ্টিকে এদের হাত থেকে রক্ষা করেন তিনিই ‘দুর্গা’।
আবার শব্দকল্পদ্রুম’ বলেছে, ‘দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা’। অর্থাৎ, যিনি ‘দুর্গ’ নামে অসুরকে বধ করেছিলেন, তিনি ‘দুর্গা’ নামে পরিচিত।
ঋষি বিশ্বামিত্র একবার কার্তিক এবং গণেশকে প্রশ্ন করেন, তাঁদের মাতার নাম দুর্গা কেন? ঋষিপ্রশ্নের উত্তরে তাঁরা বলেন, হিরণ্যাক্ষপুত্র রুরুর বংশধর দুর্গম সমুদ্রমন্থনে অসুরদের সঙ্গে ছলনা করা ও তাঁর পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ রূপে ব্রহ্মার কাছে বর চান যে, তাঁকে এমন এক নারী বধ করবেন যিনি অনাবদ্ধকে আবদ্ধ করেন। দুর্গম ব্রহ্মার কাছে বর চেয়েছিলেন, তাঁকে যেন এমন এক নারী বধ করেন যিনি অনাবদ্ধকে আবদ্ধ করেন। দেবী পার্বতী স্বয়ং মহাকালী। তিনি স্বয়ং সৃষ্টিতে আবদ্ধ নন। তা ছাড়া যা ‘অনাবদ্ধ’ অর্থাৎ সময় বা কাল, তাকে তিনি বন্দি করেন। যে-কাল’কে চিরন্তন সত্য হিসেবে মনে করা হয়, সেই কালের ঊর্ধ্বে তিনি, সেই কাল’কে নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। তাই তিনি দুর্গা।