মহাভারতের যুদ্ধ মানে শুধু সেই ১৮ দিনের যুদ্ধ নয়। সমস্ত মহাভারত জুড়েই আছে শুধু যুদ্ধের বর্ণনা। এই মুহূর্তে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বা মধ্য প্রাচ্যের যুদ্ধ বিশ্বের কাছে খুবই উদ্বেগের। কিন্তু মহাভারতে ছত্রে ছত্রে আছে বিভিন্ন যুদ্ধের বর্ণনা। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে এমন সব অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে বা এমন সব অস্ত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা বিশ্ব-ত্রাস সৃষ্টিকারী। সেইসব অস্ত্রের প্রয়োগে মূহূর্তে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে পৃথিবী। মহাভারতের কুরুক্ষেত্রে ১৮ দিনে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৬০ কোটি মানুষ। শুধু তির ধনুক, গজা, বর্শার আঘাতে কি এত সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হতে পারে! বিশেষজ্ঞরা বলেন, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে এমন সব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্রের মতো ভয়াবহ। কি সেই ভয়ঙ্কর অস্ত্র? মহাভারতের বর্ণনা অনুযায়ী –
১) ব্রহ্মাস্ত্র –
মহাভারত ও পৌরাণিক নানা কাহিনীতে ব্রহ্মাস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। এই অস্ত্র যে বিধ্বংসী এবং তা ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালাতে পারে, তাও বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যাতে ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ না হয়, তার চেষ্টা ছিল শ্রীকৃষ্ণের। শুধু অশুভ শক্তির বিনাশেই ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করার নিয়ম ছিল।
২) ব্রহ্মশীর্ষ অস্ত্র –
ব্রহ্মশীর্ষ অস্ত্র আবার ব্রহ্মাস্তের থেকেও শক্তিশালী। পুরাণ মতে, ব্রহ্মার তার মুখ থেকে নি্গত শক্তির সমান। এ্ই অস্ত্র প্রয়োগে বিপুল ধ্বংসলীলা হতে পারে। এমনকী তা হাইড্রোজেন বোমার সমতুল্য বলেও বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করে থাকেন। ফলে এই অস্ত্রের প্রযোগে বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
৩) নারায়ণী অস্ত্র –
বিশেষ যোগ্যতাবলে এই অস্ত্র লাভ করা যায় নারায়ণের কাছে, মহাভারতে তা-ই বর্ণিত হয়েছে। এই নারায়ণী অস্ত্র হাজার হাজার মিসাইলের মারণ ক্ষমতার সমান বলে ধরা হয়। এই অস্ত্র মাত্র একবারই প্রয়োগ করা যেত। এবং তা ছিল বিশেষ কারো কাছে। সবার পক্ষে এই অস্ত্র ব্যবহারের যোগ্যতা লাভ সম্ভব ছিল না।
৪) ব্রহ্মানন অস্ত্র –
মহাভারতে ব্রহ্মানন্দ অস্ত্রেরও উল্লে আছে। এই অস্ত্র ব্রহ্মাণ পঞ্চম আনন অর্থার মুখের সাদৃশ্য। এই অস্ত্র গোটা বিশ্ব সংসারকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। সেইভাবেই তৈরি এই অস্ত্র। আর এই অস্ত্র ব্যবহারেরও নানা নীতি-নৈতিকতা আছে। এবং তা সমস্ত যোদ্ধাদের পক্ষে লাভ করা সম্ভব ছিল না।
৫) ভার্গব অস্ত্র –
ব্রহ্মশীর্ষ অস্ত্রের মতোই এর মারণ ক্ষমতা। এই অস্ত্রের ব্যবহারেও বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড এক লহমায় ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এই অস্ত্রের আর একটা গুণ হল, এই অস্ত্র ব্রহ্মাস্ত্র ও ব্রহ্মশীর্ষ অস্ত্রকে ধ্বংস করার ক্ষমতা ছিল এই অস্ত্রের। এই অস্ত্রের ব্যবহারে সমুদ্রের জল ফুটন্ত হয়ে যেত।
৬) পাশুপত অস্ত্র –
মহাভারতে পাশুপত অস্ত্র লাভ করার আগে অর্জুনকে যুদ্ধ করতে হয়েছিল শিবের সঙ্গে। তারপর মহাদেব শিব অর্দুনের বীরত্বের প্রসন্ন হয়ে তাঁকে পাশুপত অস্ত্র দান করেছিলেন। চোখের দৃষ্টির মাধ্যমে এই অস্ত্র প্রয়োগ করা সম্ভব। আর কোনো দুর্বল যোদ্ধার উপর তা প্রয়োগ করার নিয়ম ছিল না।