বাংলায় প্রচলিত বারো মাসে তেরো পার্বন কিন্তু মূলত ধর্মকে কেন্দ্রে করেই। বাংলার দেবতারা মূলত তিনভাগে বিভক্ত – বৈদিক দেবতা, অবৈদিক দেবতা ও আদিবাসীদের দেবতা। এই আদিবাসী সম্প্রদায় আসলে না হিন্দু না ইসলাম। কিন্তু পরে তারা অনেকেই বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। সেই আদিবাসীদের অন্যতম দেবতা ‘ধর্ম ঠাকুর’ – যাকে আমরা ধর্মমঙ্গল কাব্যে পাই।
এবার কলকাতার প্রাণকেন্দ্র এসপ্ল্যানেড বা ধর্মতলা প্রসঙ্গে আসা যাক। ধর্ম গবেষক স্বামী সর্বানন্দ অবধূত তাঁর রিসার্চ পেপারে এই ধর্মতলা সম্পর্কে লিখেছেন, “ইতিহাস ঘেঁটে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কলকাতার ধর্মতলায় একটা সময়ে ধর্মঠাকুরের পুজো হত ব্যাপক ভাবেই। পাশ দিয়েই গঙ্গা প্রবাহিত হত, আর ওই অঞ্চলে বসবাস করত জেলে আর আদিবাসীরা। তারাই আদিকালে ধর্মঠাকুরের পুজো করত শিলাখণ্ডে। সেই প্রথা সনাতন ধর্মে চলে আসছে। আমরাও শিলাখণ্ডকেই পুজো করছি ধর্মতলায়।” তিনি আরও লিখেছেন, “ধর্মঠাকুরের কোনও মূর্তি হয় না। মূর্তি পুজো তো শুরু হয়েছে মাত্র কয়েকশো বছর আগে থেকে। আদিম যুগ থেকে যেভাবে শিলাখণ্ডে ধর্মঠাকুর পূজিত হয়ে আসছেন, আমরা সেভাবেই পুজো করছি।” এখন উচ্চ বর্ণের হিন্দুরাও ধর্ম ঠাকুরের পুজো করেন। তবে ধর্মতলায় যে ধর্ম ঠাকুরের পুজো হতো তিনি কিন্তু আদিবাসীদের দেবতা ‘ধর্ম ঠাকুর।’