নদী-নালার দেশ বাংলাদেশ। স্বাভাবিক কারণেই এখানে সাপের উপদ্রব বেশি। সেদিক থেকে বাংলায় সর্পের দেবী ‘মনসা’ পুজো হওয়া স্বাভাবিক। তবে মনে রাখতে হবে যে মনসা কোনো বৈদিক দেবী নয়। বাঙালির মননে তাঁর আবির্ভাব অনেক পরে। ভাষাতত্ত্বের ব্যাখ্যা অনুযায়ী বলা যায়, মনসা কথার উৎপত্তি ‘মানস’ শব্দ থেকে ৷ অর্থাৎ তিনি মনের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ৷ এবার আমাদের দেখতে হবে ভারতীয় পুরানে কিভাবে মনসার আবির্ভাবকে দেখানো হয়েছে।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে সর্পভয় থেকে মনুষ্যগণকে পরিত্রাণের জন্য ব্রহ্মা কশ্যপ মুনিকে মন্ত্র বা বিদ্যা বিশেষ আবিষ্কারের জন্য আদেশ করেন। ব্রহ্মার আদেশে কশ্যপ যখন মনে মনে এ বিষয়ে চিন্তা করছিলেন তখন তাঁর মনন ক্রিয়ার সাকার রূপ পরিগ্রহ করে এক মহাদেবী দীপ্যমান হন। তিনিই দেবী মনসা। তিনটি কারণে এই মহাদেবীর নাম হয় মনসা। প্রথমত তিনি কশ্যপ মুনির মানস কন্যা, দ্বিতীয়ত মনুষ্যগণের মনই তাঁর ক্রীড়া ক্ষেত্র, তৃতীয়ত তিনি নিজেও মনে মনে বা যোগবলে পরমাত্মার ধ্যান করেন। এ তো গেলো পুরানের বর্ণনা। হিন্দু শাস্ত্রে যত দেব দেবীর আবির্ভাব হয়েছে, তার পিছনে আছে তৎকালের এক বাস্তবতার ছবি।
প্রথমেই বলা হয়েছে, নদী-নালার দেশ বাংলাদেশে সাপের দেবীকে খুশি করার জন্য মানুষ মনসা পুজো শুরু হয়। আর এই সাপের বিষের মধ্যেই নিহিত আছে একটা বিশেষ প্রতীক। আমরা জানি প্রত্যেক মানুষের মনের মধ্যেই আছে ‘স্বর্গ ও নরক।’ মানুষের কাজ নিজের মনের জোরে মনের মধ্যে থাকা সমস্ত বিষকে অমৃতের রূপান্তরিত করা। সাপের দাঁতে বিষ আছে কিন্তু নিজে যখন খায় তাতে বিষ লাগে না। কিন্তু হিংসায় বা আত্মরক্ষায় যখন দংশন করে তখন দংশিত স্থানে বিষ ছড়ায়। তাই মনে বিষ হলো হিংসা ক্রোধ, লোভ এগুলো দূর করার দেবী মনসা। চিন্তা থেকে আমাদের মুক্তি নেই, তবু চিন্তা যাতে যুক্ত হতে পারে, চিন্তা যাতে রিপুর বশ না হয় তার চেষ্টাই আমাদের করতে হবে–এই শিক্ষাই দিয়েছেন দেবী মনসাব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ। দেবী ভাগবত পুরানে মনসা দেবীর লীলা ও ঘটনার কথা লেখা রয়েছে ।