ভারতীয় মাইথলোজি আসলে হিন্দু ধর্মের কর্ম ও জ্ঞান যোগের আকর গ্রন্থ। সেখানে বর্ণিত হয়েছে, হিন্দু ধর্মের সমস্ত আচার অনুষ্ঠান করার কারণ ও নিয়ম। ভারতের অন্যতম প্রাচীন পুরান
গরুড় পুরান। জানা যায়, একদিন গরুড় দেবতা বিষ্ণুর কাছ থেকে জানতে চান, মৃত্যুর পরে মানুষের আত্মার কি হয়? তখন ভগবান বিষ্ণু গরুড়কে যা বলেন, তাই গরুড় পুরানের উপজীব্য। তিনি মৃত্যুর পরে মানুষের আত্মার গতির কথা বলেন। তিনি গরুড়কে জানান –
মৃত্যুর পরে মৃত ব্যক্তির আত্মা সাধারণত ১৩ দিন ওই পরিবারের মানুষের সঙ্গেই থাকেন। সেই কারণেই হিন্দু ধর্মের একটি বিধান হলো, মৃত্যুর পরে ওই বাড়িতে গরুড় পুরান পাঠ করা। তখন মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা জেনে নেন যে কুকাজ কী, কোন কাজের ফলে সদ্গতি পাওয়া যায়। আবার উচ্চ লোকের যাত্রার জন্য কোন কোন কর্ম করা উচিত, তা-ও জানা যায় এখানে।
বিষ্ণু তাঁকে বলেন,গরুড় পুরান ব্যক্তিকে সৎকর্মের জন্য অনুপ্রাণিত করে। সৎকর্ম ও সুমতির দ্বারাই সদ্গতি ও মুক্তি লাভ করা যায়। ব্যক্তির কর্মের ভিত্তিতে দণ্ড স্বরূপ বিভিন্ন নরকের যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়, তা-ও গরুড় পুরাণে জানানো হয়েছে। কোন জিনিস ও কাজ ব্যক্তিকে সদ্গতির দিকে নিয়ে যায় তার উত্তর দিয়েছেন বিষ্ণু।আত্মজ্ঞান বিবেচনা গরুড় পুরাণের মুখ্য বিষয়। গরুড় পুরাণে ১৯ হাজার স্লোকের মধ্যে ৭ হাজার স্লোকে জ্ঞান, ধর্ম, নীতি রহস্য, ব্যবহারিক জীবন, আত্মা, স্বর্গ, নরক ও অন্য লোকের বর্ণনা পাওয়া যায়। এর মধ্যে ভক্তি, জ্ঞান, বৈরাগ্য, সদাচার, নিষ্কাম কর্মের মহিমার সঙ্গে যজ্ঞ, দান, তপ, তীর্থ ইত্যাদি শুভ কাজে সর্বসাধারণকে প্রবৃত্ত করার জন্য বহু লৌকিক ও পরলৌকিক ফলের বর্ণনা করা হয়েছে। মনে করা হয় গরুড় পুরাণের পাঠ শুনলে মৃত আত্মা শান্তি লাভ করে। মুক্তির পথ প্রশস্ত হয়। মৃত ব্যক্তি নিজের সমস্ত সন্তাপ ভুলে প্রভু পথে হেঁটে হয় সদ্গতি লাভ করে পিতৃলোকে পৌঁছয় বা পুনরায় মনুষ্য যোনীতে জন্মগ্রহণ করে।