আমরা কম বেশি সকলেই জানি মহাদেবের বরে মহাভারতে একমাত্র দ্রোন পুত্র অশ্বত্থমা অমরত্ব লাভ করেছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন, তিনি এখন কোথায়? কৃষ্ণের অভিশাপে যতদিন কলিযুগ থাকবে ততদিন অশ্বত্থমা বেঁচে থেকে তাঁর জীবন যন্ত্রনা ভোগ করবে।
এবার আমরা ফিরে যাই সেই মহাভারতের কাহিনীতে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন দ্রোণাচার্য-পুত্র। দুর্যোধনকে গুরুতর জখম অবস্থায় দেখে, অশ্বত্থামা পণ করেছিলেন, পাণ্ডবদের থেকে তিনি এর প্রতিশোধ তুলবেন। একইসঙ্গে বাবাকে ছলের মাধ্যমে হত্যা করার প্রতিশোধ নেবেন। হতাশ ও ক্ষুব্ধ অশ্বত্থমা যুদ্ধের সময় ভগবান শিবের দেওয়া চন্দ্রহ্রাস খড়্গ নিয়ে রাতের আঁধারে পাণ্ডবশিবিরে হানা দিলেন। পঞ্চপাণ্ডব ভেবে একে একে হত্যা করলেন দ্রৌপদীর পাঁচ ঘুমন্ত সন্তানকে। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে ঘুমের মধ্যেই মস্তকচ্ছেদন করলেন শিখণ্ডীর। অশ্বত্থমার রোষে প্রাণ হারালেন আরও অনেক যোদ্ধাই! আর সেই খবর মুহূর্তে পৌঁছে গেলো পঞ্চ পণ্ডব সহ শ্রী কৃষ্ণের কাছে।
দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে অর্জুন ছুটে গেলো অশ্বত্থমাকে হত্যা করার জন্য। অশ্বত্থমা যখন দেখলেন অর্জুন আসছেন, তখন তিনি প্রয়োগ করলেন ব্রহ্মশির অস্ত্র। এই অস্ত্রে পৃথিবী ধ্বংস হতে পারত। বিপদ বুঝে কৃষ্ণ থামিয়ে দিলেন সেই অস্ত্র। কিন্তু, কোথাও একটা সেটা নিক্ষেপ করতেই হত। অবশেষে পরামর্শ করে সেই অস্ত্র নিক্ষেপ করা হল অভিমন্যুর স্ত্রী উত্তরার গর্ভে।
উত্তরার সন্তানকে পরে অবশ্য প্রাণ দান করেছিলেন কৃষ্ণ। কিন্তু, অশ্বত্থমাকে ক্ষমা করেননি। অভিশাপ দিয়েছিলেন, এতগুলো অন্যায় হত্যার জন্য তিনি মৃত্যুর মাধ্যমে মুক্তি পাবেন না। কলিযুগের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁকে বেঁচে থাকতে হবে।
অনেকের বিশ্বাস মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সাতপুরা পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত আসিরগড় ফোর্ট। এই কেল্লাতেই নাকি আজও বাস করেন অশ্বথমা। এই কেল্লার শিবমন্দিরে প্রতিদিন নাকি পুজো করেন অশ্বথমা। রোজ সকালে এই মন্দিরে দেখা যায় টাটকা ফুল আর আবির শিবলঙ্গের কাছ রাখা। কে সবার আগে রোজ এখানে পুজো করে যান, তা কেউ প্রত্যক্ষ করেনি। হাজার হাজার বছর ধরে শিবপুজো করে অশ্বত্থমা তাঁর পাপস্খালনের চেষ্টা করছেন বলে প্রচলিত বিশ্বাস।