প্রথমেই মনে রাখতে হবে ‘উড়ন্ত নদী’ শব্দটির সঙ্গে আমরা বেশি পরিচিত না। কারণ উড়ন্ত নদী আমাজন ফরেস্টের একটা প্রাকৃতিক রূপ। উড়ন্ত নদী হল অ্যামাজন বেসিন থেকে দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য অংশে বায়ুমণ্ডলে পরিবাহিত প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্পের চলাচল। বনের গাছগুলি বায়ুমণ্ডলে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ছেড়ে দেয় এবং এই আর্দ্রতা বৃষ্টিপাতের আকারে অন্যান্য এলাকায় জমা হয়, যা বাতাসে ভাসমান নদী গঠন করে। আসল কথা হলো বায়ুমন্ডলে প্রচুর জল নদী রূপে ঘুরে বেড়ায়।
আমাজন বেসিনে এই উড়ন্ত নদী হামেশাই দেখা যায়। কিন্তু এবার বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের একটা বড় অংশ। হঠাৎ একসঙ্গে প্রচুর বৃষ্টিপাতই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীত খতিয়ে দেখলে এই ধরনের বন্যার উদাহরণ আরও রয়েছে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে ইরাক, ইরান, কুয়েত এবং জর্ডনের প্রতিটি দেশে ভয়াবহ বন্যা আঘাত হেনেছে। তার সঙ্গে ছিল তীব্র বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি এবং অতি মাত্রায় বৃষ্টিপাত। এত ঘনঘন বন্যার কারণ দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠতে থাকা বায়ুমণ্ডলে এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি আর্দ্রতার উপস্থিতি থাকছে। ইরাক-ইরানে বন্যার পর আবহাওয়াবিদরা দেখেছিলেন ওইসব অঞ্চলের আকাশ বা বায়ুমণ্ডল রেকর্ড পরিমাণ আর্দ্রতা বহন করছে। একবছর আগে অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশে ভয়াবহ বন্যাকে সেই দেশের রাজনীতিবিদরা “রেইন-বোমা” আখ্যা দিয়েছিলেন। আর এখানেই বিজ্ঞানীদের নজর পড়েছে বায়ুমণ্ডলীয় নদীর দিকে। যাকে ‘উড়ন্ত নদী’ ও বলা হচ্ছে, তার ধাক্কাই কি এবার ভারতীয় উপমহাদেশে?
বায়ুমণ্ডলীয় নদী সবসময়ই ছিল। কিন্তু, বিশ্বের গড় উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি জলীয় বাষ্প তৈরি হচ্ছে। বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলির রুদ্রমূর্তি ধারণের জন্য মানবসমাজকেই কাঠগড়ায় তুললেন বিশ্বের তাবড় পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। এর প্রধান কারণ উষ্ণতা বৃদ্ধি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমরা যত উন্নত হচ্ছি, তার প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়ে চলেছে। সমুদ্রের জল যখন উষ্ণ হয়ে উঠে, তখন বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলিতে জমা হয়। স্বাভাবিক কারণেই শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, উপকুলের নগরগুলোতে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। সমুদ্রের কাছাকাছি থাকা দেশগুলিতে বেশি প্রভাব ফেলে উড়ন্ত নদী। এই উড়ন্ত নদীর রুদ্রমূর্তিতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ। পদ্মাপারের দেশ থেকে উড়ে এসে কি বাংলায় তাণ্ডব চালাবে উড়ন্ত নদী? ভাসাবে কলকাতাকে? বঙ্গোপসাগর থেকে কলকাতা বেশি দূরে নয়। ঘূর্ণিঝড় থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বাংলাদেশের পাশাপাশি অনেক সময় বাংলার উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে প্রভাব ফেলে। উষ্ণায়ন রোধ করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলো ভাসবে বন্যায়।