Tuesday, January 21, 2025
Homeখবরস্বপ্নপুরী পাশাবং -- আগামীর গ্রামীণ পর্যটনের মডেল

- Advertisment -

স্বপ্নপুরী পাশাবং — আগামীর গ্রামীণ পর্যটনের মডেল

 

পাশাবং শব্দটির সঙ্গে আপনার পরিচয় আছে কি?পাহাড়ের মানুষদের আছে।আর শব্দটির অর্থ হল , একগুচ্ছ ফুলের বাগান। সমতলের সঙ্গে পাহাড়ের মেলবন্ধন হয়েছে পাশাবং শব্দবন্ধ দিয়ে আর তা দিয়েই খুলে যাচ্ছে পর্যটন মানচিত্রে নতুন দিগন্ত।

যেন বুদ্ধদেব গুহের রোমান্টিক উপন্যাসের প্রেক্ষাপট।স্বপ্নপুরী পাশাবং আগামীর গ্রামীণ পর্যটনের মডেল হতে চলেছে।গ্রামের সম্পদকে পর্যটন মানচিত্রে নিয়ে এসে স্বনির্ভর হওয়ার এক নতুন স্বপ্ন দেখার শুরু। মন ভরে যাবে পর্যটকদের, খুলে যাবে মর্তে স্বর্গের দ্বার। স্বনির্ভরতার মূলমন্ত্রে দীক্ষালাভের পথে পাহাড়ি গ্রামের বেকার ছেলেমেয়েদের সাথে সমতলের বেকার ছেলেমেয়েদের মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছে পাশাবং গ্রাম পর্যটন কেন্দ্রের এক নতুন দিগন্ত।
মাত্র ৯ জন বেকার ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে গড়ে ওঠা এই ছোট্ট প্রয়াস , হয়তো পশ্চিমবঙ্গে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে এবং চাকরির উপর নির্ভরতা না করে স্বনির্ভর হওয়ার যে প্রকল্প কালিম্পং জেলার লাভা ব্লকের পাশাবং গ্রামের এই প্রয়াসকে কুর্নিশ জানাতে বাধ্য হবে সরকারি দফতর। কেন?

রোশান রাই , পূর্ণ রাই , পূজা দাস প্রশান্ত প্রধান , অমিত দেয় , রবি রাই দাওয়া লামা এরকম কিছু বেকারের স্বপ্নের চোখে বাস্তবের মায়া কাজল পড়িয়েছেন রাজেন প্রধান। গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলে এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত হওয়ার লক্ষ্য পর্যটন কেন্দ্রের দ্বার খুলে দিয়েছে ।

কাছেই গীত খোলা অর্থাৎ নিরন্তর গতিতে নদীর কলকল শব্দ মানুষের মানসিক যন্ত্রণাকে নিরাময় করে এক শান্তির পরিবেশকে গড়ে তোলে এই পাশাবং পর্যটন কেন্দ্র । পাশাবং শব্দটির সঙ্গে ফুলের আত্মিক যোগ। নভেম্বর মাস থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এই এলাকাটি ঢেকে যায় চেরি ব্লসম ফুলে , এলাকাটি গোলাপি ফুলে ভরে যায় , দেখে মনে হবে , উত্তরবঙ্গে এক টুকরো কাশ্মীর।

তিলে তিলে জমানো টাকায় এই বেকার যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভর করে তোলার যে প্রয়াস নেওয়া হয়েছে , তাতে ওই গ্রামের সাধারণ মানুষের আন্তরিক সমর্থনের ফলেই আজ এই গ্রাম পর্যটনের মানচিত্রে স্থান পেতে চলেছে। থাকা খাওয়ার সুবন্দোবস্ত , কমখরচে মনোরম উত্তরবঙ্গের মাটিতে এক মায়াপুরী।

বর্ষাকালেও লা জবাব স্বপ্নের এই মায়াপুরী । ঘনঘোর বৃষ্টিতে টিনের উপর টিপটিপ শব্দ মনে অনন্ত শান্তির বাণী বয়ে নিয়ে আসে পাশাবং কটেজ ।

গ্রামীণ পর্যটনের এই ধরনের হাল-হকিকত সম্ভবত অনন্য ও অতুলনীয়। বেকার ছেলেমেয়েরা এই উদ্যোগ নিয়ে গ্রামীণ পর্যটনকে সফল হতে চলেছে।রাস্তার পরিকাঠামোর উন্নয়ন নিয়ে কিছুটা খামতি থাকলেও এই গ্রামের সৌন্দর্যকে মুগ্ধ করবেই পর্যটকদের। করবে না কেন? কাছেই রূপ মহলের খাস খাজানা।একদিকে বিস্তীর্ণ পাহাড়ি চা বাগানের দৃশ্য , পাশে বয়ে চলা গীতখোলা নদী , পাশাপাশি মাত্র দু কিলোমিটার গেলেই মিরিকের আদলে তৈরি নকদাড়া ঝিল সাথে নৌকো বিহার আনন্দকে সীমাহীন করে তুলতে বাধ্য। নামজাদা পর্যটন কেন্দ্রগুলি কাছেই। এখানে থেকে কাফেরগাঁও, রিসব, লাভা , কোলাখাম এবং ঝান্ডি গ্রামে যাওয়া খুব সহজ। তবুও স্বপ্নপুরী পাশাবং যেন মর্তে স্বর্গধাম।

পর্যটন শিল্পের সৌন্দর্য আর সুব্যবস্থার সমাহার পর্যটকদের যেমন খুশি করবে তেমন উত্তরবঙ্গের আর্থিক উন্নয়ন ঘটাতেও বাধ্য।সাধে কি আর রোশান রায় বলে ওঠে,ধরনের প্রয়াস যদি পাহাড়ি গ্রামে আরো বেশি করে নেওয়া যায় , তাহলে গ্রামের মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। রাজেন প্রধানের ভাবনার বিকাশ স্বপ্নপুরী পাশাবংকে পর্যটনের মডেল করে তোলার দিশারী মনে করেন স্থানীয়রা।

স্বপ্নপুরী পাশাবং ঘিরে পর্যটন স্থলের বিকাশ আগামী দিনে গ্রামের কৃষকের স্বনির্ভরতার অগ্রিম বার্তাবাহী কারণ এখানকার কৃষকরা কৃষি উৎপাদনের কাজ সম্পূর্ণভাবে গোবরসারে উৎপাদন করেন । উৎপাদিত ফসলের স্বাদ ভোলার নয়।

এখানে পৌঁছে যাওয়ার চাবিকাঠি পেতে সবচেয়ে নিকটবর্তী রেলস্টেশন নিউমাল জংশনে আসতে হবে । নিউমাল হয়ে গরুবাথান, চেলখোলা পিকনিক পথে ঝাণ্ডীর শুনতালির গ্রাম হয়ে পাশা বং মাত্র চল্লিশ কিলোমিটার । অন্যদিকে,এনজিপি স্টেশন থেকে অথবা বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে আনুমানিক আড়াই ঘণ্টা সময় পৌঁছে যাবেন এই গ্রামে । রাস্তার অবস্থা গাড়ি যাতায়াতের পক্ষে হয়তো দুর্দান্ত নয় , ছোট ছোট গাড়িগুলি লাভা হয়ে গ্রামে প্রবেশ করে ।

পাশাপাশি পাহাড়ি সংস্কৃতির মেলবন্ধন গড়ে তোলার এক নতুন দিগন্ত তৈরি হচ্ছে এই পর্যটন কেন্দ্রের মাধ্যমে। প্রকল্পটির উদ্বোধন করেছেন জিটিএর ভাইস চেয়ারম্যান শঙ্খবির সুব্বা । তিনি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন স্বাস্থ্যকর মানসিক শান্তির আবাস হয়ে উঠুক পাশাবং। সব মিলিয়ে,, একথা বলা যায় -সেদিন আর হয়তো দূরে নেই যখন গ্রামীণ পর্যটনের মডেল হয়ে উঠবে স্বপ্নপুরী পাশাবং।।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Most Popular

Recent Comments